Top Newsদু'দিনে লাগাতার বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক এলাকায়

দু’দিনে লাগাতার বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক এলাকায়

SBN DIGITAL: দুই দিনের বৃষ্টিতেই জেলার ৫টি ব্লক সকাল থেকেই জলের তলায়। যে সরকার  গতবারের ভেঙে পড়া নদী বাঁধ ও দীর্ঘ বছর ধরে থাকা দূর্বল নদী বাঁধ মেরামত করতে পারে না সময় মতো তারা ঘাটাল মাস্টার প্লেন করবে এমন দৃশ্যতে প্রশ্নের  মুখে। সবচেয়ে আতংকের বিষয় হলো ঘাটাল ও দাসপুর এই ব্লকে যে ৫ টি সুইলিস গেট নির্মাণ হচ্ছে। গত ছয় মাসেও তার কাজ কোথায় অর্ধেক, কোথাও এক তৃতীয়াংশ নির্মান হওয়ায় সেখান কার ৯৮৭ টি মৌজার মানুষ আতংকিত। গতকাল পর্যন্ত নদী গুলো শুকনো ছিলো। সেই মরা নদীতে সকাল থেকেই  জলের তোড়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শিলাবতী, কাঁসাই, ঝুমি, তমাল, পারাং, কেঠিয়া,কানা একাধিক নদী ফুঁসছে, পাড় উপছিয়ে  জলের তলায় রাস্তা ও ঘরবাড়ি, চাষের জমি। গড়বেতা, গোয়ালতোড়,  চন্দ্রকোনা,  কেশপুর এমন ব্লক গুলির ৩২ টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার ৪০০ অধিক মৌজা প্লাবিত।  সাত সকালে নদী গুলি শুকনো থাকলেও হঠাৎ করে হড়পা বানের মতো করে জলের স্রোত ধেয়ে আসে। কোথায় নদীর পাড় উপছিয়ে, কোথাও কাঠের সেতু  হুড়মুড়িয়ে ভেঙে জলের স্রোত আছড়ে পড়ে। দুই দিনের বৃষ্টিতে মাঠ খাট সড়ক সহ গ্রামীন রাস্তা জলের তলায়। আতংকে একের পর এক নদী তীরবর্তী গ্রাম। নদী বাঁধ নতুন করে ভাঙার দুশ্চিন্তা এবারে ছিলো না । আতংক ছিলো  গতবারের বন্যায়  ভেঙে পড়া নদী বাঁধ মেরামত না হওয়ায়। সেই  আতংকের প্রহর একেবারে হাজির হলো। ঝাড়গ্রাম জেলার ডুলুং, কাঁসাই তারাফেনি তিন নদীও ফুঁসছে। বাকুড়া ও ঝাড়গ্রাম জেলার যোগাযোগ সড়কে জলের স্রোত। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুপুর থেকেই। বিনপুর, গিধনি জাম্বনী এমন বহু ব্লকের একের পর এক গ্রাম প্লাবিত। এমন ব্লক গুলি জুড়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। ভারী বর্ষণে শিলাবতী নদীর জলে ডুবেছে ভেলাইডিহা সেতুও। গড়বেতার মাওতাতে কাঠের সেতু ভেঙে ভেসে গেছে।  গোয়ালতোড়ের হুনগড় ও আমলাশুলি সড়ক রাস্তার উপর দিয়ে বিপদ জনক ভাবে জলের স্রোত। সড়ক রাস্তায় বিরাট অংশে ধ্বস। সবজির গড় গড়বেতা ও গোয়ালতোড় মিলিয়ে ১৫ টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সমস্ত ধরনের সবজির মাঠ ও মাচা জলের তোলায়।  শিলাবতীর পাড় উপছিয়ে জলের স্রোত আছড়ে পড়ায় লক্ষনবাঁধ, মালবাঁধি, রঘুনাথপুর, হুমগড় এমন একাধিক মৌজায় একতলা ঘরে বন্যার জল। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ মাথায় জিনিষ পত্র নিয়ে জল ঠেলে যাতায়াত করার দৃশ্য। বহু পরিবার একতলা ঘরের ছাদে ত্রিপল টাঙ্গিয়ে এই বৃষ্টিতে পরিবার নিয়ে রয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি চন্দ্রকোনার ২ টি ব্লক ও কেশপুর ব্লকেও। ঘাটাল ও দাসপুরের ২ টি ব্লকে সন্ধ্যার মুখে জল ঢুকতে শুরু করেছে। এমন তিন ব্লকেই ৪২ টি স্থানে গতবারের ভেঙে পড়া বাঁধ এখনো মেরামত সম্পূর্ণ হয়নি। ফলে বিপদের আশংকায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি। তিল বাদাম সবজী এমন চাষের জমি মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জলের তলায়। হুমগড়, গড়বেতায় বহু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে জানা যায়। শিলাবতী নদীর জলের তোড়ে গড়বেতার মায়তা থেকে গোয়ালতোড় হয়ে বাঁকুড়া যাওয়ার পাকা রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এছাড়া জেলার শিলাবতী ও ঝুমি নদীর উপর বাঁশ ও কাঠের সেতু  ভেঙে জলের স্রোতে  ভেষে গেছে ২১ টি।
বর্তমানে বিপদ জনক হলো চন্দ্রকোনা  ২ ব্লকের ভগবন্তপুর, বান্দিপুর,বাঁশপোতা, কেশাডাল, চন্ডীপুর, ঘোষকিরা  এই মৌজা গুলিকে ঘিরে রয়েছে শিলাবতী, কেঠিয়া ও কানা নদী। তিনটি নদীতেই বিপদ জনক ভাবে জলের স্রোত।  আর এই কেশিয়া ডাল মৌজায় শিলাবতীর পাড়ের দেড় কিমি ভগ্ন অবস্থায়। গত বারের বন্যায় ভেঙে পড়া সেই নদী বাঁধ আজ অবধি মেরামত করা হয়নি। সকাল থেকেই গ্রামের  মানুষ নিজেদের বাঁশ ও বস্তায় মাটি ভরে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন।  সন্ধ্যার মুখে ঘোষিকিরাতে শিলাবতীর নদীর সেই দূর্বল  বাঁধ ভেঙে পড়ে। এর ফলে ঘোষকিরা, শীর্ষা, খুড়শি, ধর্মপোতা, কেল্লা, ধাইকোন, এমন ৯ টি  মৌজা জলের তলায়।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেছেন, ‘গড়বেতার দু’টি ব্লকে মোট ৯টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র কার্যত জলের তলায়। স্বাস্থ্যকর্মীরা পৌঁছতে পারছেন না। আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে নৌকা চেয়েছি। তবে, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ফ্লাড সেন্টারে পর্যাপ্ত ওষুধের যোগান রয়েছে।’ তবে শিলাবতী নদীর জল আরও বাড়লে ঘাটালের ১৭ নম্বর  ওয়ার্ডের সুইলিশ গেট নির্মাণ অসম্পূর্ণ থাকার কারনে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালও জলের তলায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ইতি  মধ্যেই গত দু’দিন ধরে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ক্রমাগত জল ছাড়া হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোট ৪৫ হাজার ৯০০ কিউসেক লিটার জল ছাড়া হয়েছে। জল ছাড়ার পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়। জল ছাড়তে শুরু করেছে ডিভিসি-ও। মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। মাইথন থেকে ২০ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ১৭ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হবে বলে ঘোষনা। সেই জল গড়িয়ে এলে বন্যা আরো ভয়াবহ আকার নেবে।  তাতে ভাঙা নদীর বাঁধ ও অসম্পূর্ণ সুইলিস গেট দিয়ে ঘাটাল মহকুমা জলের তলায় চলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।