SBN Digital: মানুষ ভোলেনি সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানের সন্ত্রাসের কাহিনী। সেই শাহজাহান এখন জেলে বন্দি। এবার সন্দেশখালির ছায়া পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে! সেখানে শেখ ফিরোজ নামে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা। ফিরোজের বিরুদ্ধেও উঠেছে এলাকায় সন্ত্রাস, অত্যাচার, জুলুমবাজি চালানোর অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘ফিরোজ নিজেকে রাজ্য তৃণমূলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রীর ঘনিষ্ট বলে দাবি করেন। ফিরোজের অত্যাচার ‘তালিবানি’ সন্ত্রাসকেও হার মানিয়ে দিয়েছে।’
জানা গিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ ফিরোজের বাড়ি বেড়ুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদি গ্রামে। ফিরোজ বড় কোনও পদে থাকা তৃণমূল নেতা নয়। তার স্ত্রী হাসনারা বেগম বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই তার বাড়বাড়ন্ত। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ‘স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকেই ফিরোজ নিজেকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের ‘বেতাজ বাদশা’ প্রতিপন্ন করা শুরু করে দেন। ২০২১ সালে বিধানসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই ফিরোজ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নিজের গ্যাং তৈরি করে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। অন্যের জমি কেড়ে নেওয়া, লুটপাট, তোলাবাজি, এমনকি মহিলা নিয়ে ‘ফুর্তি’ করার ব্যাপারেও ফিরোজ পিছুপা থাকেননি বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। প্রচুর অর্থ কামিয়ে, প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়ে গিয়েছেন ফিরোজ। এমনকী কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়েও ফিরোজ অনেকের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছে। মসজিদের তহবিলের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া থেকে মসজিদের জমিতে ’জিম সেন্টার’ গড়ে তুলতেও ফিরোজ কুন্ঠাবোধ করেননি। দেশের আইন কানুন, প্রশাসন, কোনও কিছুকেই তোয়াক্কা করে না সে। গ্রামবাসীর ফিরোজের সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পেতে জেলা পুলিশসুপারের দ্বারস্থ হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ।
যদিও তার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ ফিরোজ। ফিরোজের পালটা অভিযোগ, বেরুগ্রাম অঞ্চল তণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন ওরফে দানি মানুষকে তার বিরুদ্ধে ভুল বুঝিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন। পাশাপাশি সাহাবুদ্দিনকে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা বলেও দাবি করেছেন ফিরোজ। ফিরোজ বলেন, “সাহাবুদ্দিনের নানান আর্থিক দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করেছিলাম। তার বদলা নিতে সে পরিকল্পনা করে এলাকার লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলেন।” তবে কারুর জমি, বাড়ি, সম্পত্তি কেড়ে নেননি বলে শেখ ফিরোজ দাবি করেছেন। বেরুগ্রাম আঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন অবশ্য ফিরোজের এইসব বক্তব্যকে চোরের বড় গলা বলে কটাক্ষ করেছেন। ফিরোজের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে সাহাবুদ্দিন বলেন, “ওর সব অন্যায় ও অপকর্মের কথা আমি দলের জেলা ও ব্লক সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছি।” দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বেরুগ্রামের ঘটনা বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে। তবে যেসব অভিযোগের কথা শুনছি তা সত্য হলে দল নিশ্চই ব্যবস্থা নেবে।” জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “তৃণমূলের রাজত্বে গোটা বাংলাই এখন সন্দেশখালি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলকে সন্দেশখালি বানানোর নেপথ্য কারিগর শুধু একা ফিরোজ নয়। বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি দানি সহ ব্লক তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতারাও সমান দোষী। এদিকে শাসক নেতার সন্ত্রাস ও অত্যাচার নিয়ে জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের মানুষজনের সন্দেশখালির কায়দায় গর্জে ওঠার খবর চাউর হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
সন্দেশখালির ছায়া এবার পূর্ব বর্ধমানে! তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন গ্রামের বাসিন্দারা
