Top Newsভূতের ভয়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী বৃদ্ধ ভূতের ভয়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী বৃদ্ধ
SBN DIGITAL: মৃত্যুই যেন পরিবারের ভবিতব্য! বাবা আত্মহত্যা করেছেন গলায় দড়ি দিয়ে, দুই ভাইঝি একই সঙ্গে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করেছেন, দাদার মৃত্যু হয়েছে ট্রেনে কাটা পড়ে। এই অপঘাতে মৃত্যুর ভবিতব্যই ফিরে এল বৃদ্ধের জীবনে। এবার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেন বৃদ্ধ। মৃতের নাম, মনোতোষ দাস (৭০), বাড়ি রানিনগর থানার মালোপাড়া এলাকায়।
পরিবারের দাবি, ভূতের ডাকে আতহত্যা করেছেন বৃদ্ধ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রানিনগরের মালোপাড়া গ্রামের মনোতোষ দাস স্ত্রী ছেলে নিয়ে সুখেই সংসার করছিলেন। বেশ কিছু বছর আগে মনোতোষের বাবা গুরুপদ দাস গলায় দড়ি দিয়ে নিজের বাড়িতেই আত্মহত্যা করেন। তার কয়েক বছর পরে মনোতোষবাবুর দাদার দুই মেয়ে ঋঠু দাস এবং মিঠু দাস একই সঙ্গে গায়ে আগুন ঢেলে আত্মহত্যা করেন। বছর কয়েকের মধ্যেই ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয় মনোতোষবাবুর দাদা সন্তোষ দাসের। বাড়িতে পরপর অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনায় নিজেই ভেঙে পড়েন মনোতোষ। চাষবাস ছেড়ে বাড়িতে বসেই আপন মনে ‘বিড়বিড়’ করতে শুরু করেন তিনি, মেজাজও হয়ে যায় খিটখিটে।
গত ৯ জুন বাড়িতে বিষ খেয়ে নেন মনোতোষ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে এবং পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মৃত্যু হয় মনোতোষ দাসের। তার মৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ভূতের ভয় পেতে শুরু করেছিলেন মনোতোষ দাস। ভূতের ডাক পেয়ে সে কারণে নিজেই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। এ বিষয়ে মনোতোষ দাসের মেয়ে নয়না সরকার দাস বলেন, “বাড়িতে পরপর আত্মহত্যার ঘটনা ভীষণ ভয়ের সৃষ্টি করেছিল। অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনাগুলির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে কারণে জোড়া কালীর পুজো দেওয়া হয়েছিল। তবুও ভয় যেন বাবাকে গ্রাস করছিল।
কেননা বাড়িতে কোনো অশান্তি ছিল না। মা এবং এক ছেলেকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাঁর বাবার।” নয়নাদেবী আরো বলেন, “ঘটনার দিন বাড়িতে কোন অশান্তি হয়নি অথচ বাবা বিষ খেয়ে ফেললেন!” অন্যদিকে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন মুর্শিদাবাদ জেলা শাখা সম্পাদক তথা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “গ্রামে গঞ্জে এখনও ভূত বা অশরীরী আত্মার একটা কুসংস্কার রয়েছে। অন্ধ বিশ্বাসকে নিয়ে গল্প গেঁথে ফেলা হয়। মৃত্যুর পরবর্তী অধ্যায় নিয়ে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়।
পরিবারের কারও অপঘাতে মৃত্যু হলে গভীর রেখাপাত করে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে। ‘কমান্ড হ্যালুসিলেশন’ বা কেউ যেন ডাকে এবং সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বেড়ে যায়। অথচ ওই ধরনের রোগ সারতে বেশি সময় লাগে না। সময় মত চিকিৎসা করলে তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রোগ সেরে যায়।”