রাজ্যExclusive: প্রেমিকার চাপে পড়ে সহকর্মীকে খুন! খড়গপুরের বেনাপুর এলাকায় ফাঁকা মাঠ থেকে...

Exclusive: প্রেমিকার চাপে পড়ে সহকর্মীকে খুন! খড়গপুরের বেনাপুর এলাকায় ফাঁকা মাঠ থেকে যুবকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব সংবাদদাতা: পরকীয়ার টান উপেক্ষা করতে না পেরে শেষে সহকর্মীকে খুন করে ফেঁসে গেলেন একটি মিষ্টি দোকানের এক কারিগর। তারসাথে পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল খুন হয়ে যাওয়া এক যুবকের স্ত্রী। যদিও এই খুন তিনি করতে চাননি বলে পুলিশের জেরার মুখে জানিয়েছেন ধৃত মিষ্টি দোকানের কারিগর সুশান্ত বাউরি। কিন্তু প্রেমিকার ক্রমাগত চাপের মুখে তাঁকে এই কাজটি করতে হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। তিনি চাননি সহকর্মীকে খুন করে পথের কাঁটা সরাতে। বরং সবকিছু বজায় রেখেই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কটি চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আর এদিকে বিস্তর নাটক করার পরেও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল মৃত যুবকের স্ত্রী সুষমা প্রামাণিক। মূলত মৃতের স্ত্রীকে প্রথমে আটক করে পুলিশ গোটা ঘটনার কিনারা করতে সফল হয়েছে। তাঁর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের সূত্র ধরে প্রেমিক সুশান্ত বাউরিকে পুলিশ ধরে। বৃহস্পতিবার পুলিশ ধৃত এই দুজনকে জেলা আদালতে হাজির করে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে বিচারকের নির্দেশে দুজনের তিনদিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। এই ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বললেন ” পরকীয়া সম্পর্কের জেরে এই খুন। আমরা দুজনকেই গ্ৰেফতার করেছি। তবে ঘটনার তদন্ত এখনও বাকি রয়েছে। আরও কিছু বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” প্রসঙ্গত মঙ্গলবার সকালে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার বেনাপুর ও পানাছত্রের মাঝে রাইকিশোরী এলাকায় রাজ্য সড়কের ধারে একটি ফাঁকা মাঠে এক যুবকের গলার নলি কাটা ও মুখ থেঁতলানো অবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার করে। প্রথমে এই যুবকের নাম পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় মৃতের স্ত্রী সুষমা প্রামাণিক স্বামীর মৃতদেহ সনাক্ত করেন। পুলিশ জানতে পারে মৃতের নাম টিঙ্কু প্রামাণিক (৩৮)। আদি বাড়ি মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজার এলাকায় হলেও স্ত্রীকে নিয়ে ডেবরা থানার হাসিমপুর এলাকায় বসবাস করতেন। আর কাজ করতেন খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার বেনাপুর এলাকায় একটি মিষ্টি দোকানে। সেখানেই পরিচয় হয়েছিল মিষ্টির কারিগর সুশান্ত বাউরির সঙ্গে। আর সেই পরিচয় পরবর্তীকালে দুই সহকর্মীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে পরিণত হয়। আর সেই সূত্র ধরেই টিঙ্কুর স্ত্রী সুষমার সঙ্গে সুশান্তর পরিচয় হয়। প্রথমে ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। আর সেই পরিচয় পরবর্তীকালে একটি পরকীয়া সম্পর্কের দিকে পৌঁছায়। এদিকে প্রথমে সহকর্মী সুশান্তের সঙ্গে স্ত্রীর এই পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে নি টিঙ্কু। কিন্তু পরে তিনি সবকিছু জানতে পারেন। তখনই দুই সহকর্মীর মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা হলেও শীতল হয়ে যায়। এদিকে স্বামী সবকিছু জেনে যাওয়ায় প্রমাদ গুনছিলেন সুষমা। তিনি ঠিক করেন এই পরকীয়া সম্পর্কের একটি পরিণতি করতে হলে পথের কাঁটা সরাতে হবে।

সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করেন সুষমা। মূলত প্রেমিকা সুষমার পরামর্শ ও বুদ্ধিতে পুরুলিয়ার বাসিন্দা সুশান্ত সোমবার রাতে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানার বেনাপুর ও পানাছত্রের মাঝে রাইকিশোরী এলাকায় একটি ফাঁকা মাঠে সহকর্মী টিঙ্কুকে ডাকেন। সেখানে ঠান্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে দুজনে মদ পান করেন। সেইসময়েই স্বামীকে কোনও চলন্ত লরির তলায় ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দেয় সুষমা। কিন্তু রাজি হচ্ছিলেন না সুশান্ত। তখন স্বামীকে যেভাবেই হোক মেরে ফেলার জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে শুরু করে সুষমা প্রেমিক সুশান্তের উপর। তখন ওই চাপে সহকর্মীর গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় সুশান্ত। তারসাথে মুখটি একটি থান ইট দিয়ে থেঁতলে দেয়। তারপর পালিয়ে যায়। এদিকে মঙ্গলবার সকালে এই মৃতদেহ উদ্ধারের খবর জানার পরেই সুষমা মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজার এলাকায় শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে যায়। স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। তারপর খোঁজখবর করার পর সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মৃত স্বামীকে সনাক্ত করেন। কিন্তু এত কিছু করার পরেও শেষ রক্ষা হল না।

কারন ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথম থেকেই সুষমার আচরণ পুলিশের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছিল। তারপর মঙ্গলবার রাতের দিকে সুষমাকে খড়গপুর গ্ৰামীণ থানায় ডেকে পাঠানো হয়। শুরু হয় জেরা। পুলিশের জেরার মুখে সুষমা প্রেমিক সুশান্তের নাম প্রকাশ করে দেয়। তারপর সুশান্তকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। জানা গিয়েছে প্রথমে সুশান্ত ঘটনার কথা স্বীকার করতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে পুলিশের লাগাতার জেরার মুখে ভেঙ্গে পড়েন। স্বীকার করে নেন সহকর্মী টিঙ্কুকে খুন করার কথা। তবে এই খুন তিনি করতে চান নি। প্রেমিকার ক্রমাগত চাপের মুখে তাঁকে এই কাজ করতে হয়েছে বলে পুলিশের জেরার মুখে বলেন। জানা গিয়েছে বেনাপুর এলাকায় একটি মিষ্টির দোকানে দুজনে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন।